বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৬ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জননেত্রী শেখ হাসিনা

জুনাইদ আহমেদ পলক:
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ও পাকিস্তানের স্বৈরশাসন এবং ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট পরবর্তী ২১ বছর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সামরিক শাসন-শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট হওয়ার পরও বাংলাদেশের জনগণ কখনো উন্নত, সমৃদ্ধ ও মহৎ জীবনের স্বপ্ন ত্যাগ করেনি। পাকিস্তানি স্বৈরশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে কঠোর ত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতার নবীন সূর্যের উদয় বাংলাদেশের জন্য উজ্জ্বল সম্ভাবনার দুয়ার অবারিত করে। প্রযুক্তি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব খাতে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গৃহীত নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নের সুফল যখন মানুষ পেতে শুরু করে এবং অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়ায় ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীলরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। দেশ নিমজ্জিত হয় অমানিশার নিকশ কালো অন্ধকারে। দিশেহারা জনগণ এ অবস্থা থেকে উত্তরণে একজন দূরদর্শী ও যোগ্য নেতার প্রতীক্ষায় থাকেন, যে নেতা তাদের দেবেন উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনের সন্ধান।

১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনার ভারতে ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন জনগণের সেই অভাবই যেন পূরণ হয়। তিনি শুরু করেন স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন। সুদীর্ঘ ২১ বছরের স্বৈরশাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণ তাকে ক্ষমতাসীন করে। শুরু হয় বাংলাদেশের মানুষের জন্য গৌরবময় জীবন এবং উন্নত ও সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলার পথে নবযাত্রা। এই অভিযাত্রায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব রাষ্ট্র পরিচালনার সময়কাল ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত। এই সময়ে তিনি বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন অনন্য উচ্চতায়। অতি সম্প্রতি ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৪০ সালে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ ২০টি অর্থনীতির একটি হাব হবে। আর ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) ২০২২ সালেই জানায়, বর্তমান ধারায় অর্থনৈতিক বিকাশ অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বে ২৫তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। প্রশ্ন জাগতে পারে, কীভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্বের বিস্ময়ে পরিণত হলো? এক কথায় এর উত্তর হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের তিনটি অসাধারণ গুণ সততা, সাহস ও দূরদর্শিতা।

বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্রটি বোঝার জন্য সংক্ষেপে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শাসনামলের কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরছি। ১৯৯৬-২০০১ সময়ে গড় জিডিপি ছিল সাড়ে ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ছিল ৪.৪ শতাংশ। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের শাসনসহ আট বছরে অর্থনৈতিক ক্রমবিকাশের ধারায় ছেদ পড়ে। ২০০৯ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা আবারও ক্ষমতাসীন হন। তার টানা তিন মেয়াদের শাসনের ১৪ বছর পার হয়েছে। এ সময়ে গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ছিল ৬.৬ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ শতাংশের ওপরে এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ শতাংশ অতিক্রম করে। ২০০৫-২০০৬ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ ডলার ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ২ হাজার ৭৬৫ ডলার। ২০০৫-২০০৬ সালে জিডিপির আকার ছিল ৭১.৮২ বিলিয়ন। বর্তমানে তা ৪৬০.২০ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ০.৭৪৪ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ১ বিলিয়ন ডলারের কম, বর্তমানে তা ২১ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমানে ১০ গুণের বেশি। গড় আয়ু ছিল ৫৯ বছর, বর্তমানে ৭৩.৫৭ বছর। শিশুমৃত্যুর হার ৮৪ থেকে কমে হয়েছে ২১.৫৫ শতাংশ। ২০০৫-২০০৬ সালে খাদ্য উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন। আর বর্তমানে তা ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট আর বর্তমানে তা ২৫ হাজার ২২৭ মেগাওয়াট।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন তিনি। কানাডার আদালতে তা প্রমাণিত হয়। নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পের বাস্তবায়ন করায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়। দ্বিতীয়ত, তার সাহসিকতা। জেনারেল জিয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের বৈধতা দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধী এবং পঁচাত্তরের ঘাতকদের বিচারের উদ্যোগ নিয়ে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। দেশি-বিদেশি প্রবল চাপ থাকা সত্ত্বেও সাহসের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধী ও পঁচাত্তরের খুনিদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন। বিচারহীনতার সংস্কৃতির চির বিলোপ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তৃতীয়ত, দূরদর্শিতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তা ও স্বপ্নের ফসল ডিজিটাল বাংলাদেশ। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার দিনবদলের সনদ রূপকল্প ২০২১-এর মূল উপজীব্য হিসেবে এর আবির্ভাব। খ্যাতিমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের আর্কিটেক্ট। বিগত প্রায় ১৩ বছর ধরে তিনি সামনে থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা যে একটি আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে কতটা দূরদর্শী ছিল তার প্রমাণ এর সফল বাস্তবায়ন। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ এমন কোনো খাত নেই, যেখানে প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান হচ্ছে না। দেশে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। দেশের ১৬ কোটির বেশি মানুষ মোবাইল সিম ব্যবহার করে। ১৩ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে সরকারি-বেসরকারি নানা সেবা। প্রযুক্তি ব্যবহারে মানুষের অভিযোজন ও সক্ষমতায় গ্রাম ও শহরের বৈষম্য দূর হচ্ছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সাফল্যের ভর করেই দূরদর্শী, প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেন। আমরা সকলেই জানি যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে ডিজিটাল বাংলাদেশ ছিল সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘোষণা। ঠিক একইভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণাও ইতিমধ্যে মানুষের মনে শুধু আলোড়ন সৃষ্টিই করেনি নব আশার সঞ্চার করেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ কতটা আধুনিক একটি কর্মসূচি তা এর চার স্তম্ভের লক্ষ্য থেকেই বোঝা যায়। সম্পূর্ণ পরিকল্পনা শর্টটার্ম, মিডটার্ম এবং লংটার্ম টাইমফ্রেমে সাজানো হয়েছে। স্মার্ট সিটিজেন হবেন বুদ্ধিদীপ্ত, দক্ষ, উদ্ভাবনী, সৃজনশীল, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জাগ্রত দেশপ্রেমিক এবং সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী মানসিকতা সম্পন্ন নাগরিক। প্রত্যেক নাগরিকের প্রযুক্তিতে অভিযোজন ও অভিগম্যতা নিশ্চিত করা হবে। স্মার্ট ইকোনমিতে গড়ে উঠবে ক্যাশলেস, সার্কুলার (বৃত্তাকার), উদ্যোক্তামুখী, গবেষণা ও উদ্ভাবননির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি। আর্থিক লেনদেন হবে নগদবিহীন। পণ্যের পুনঃব্যবহার করে বৃত্তাকার অর্থনীতি গড়ে তোলা হবে। ফলে শূন্য বর্জ্য উৎপাদন হবে। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই), রোবটিক্স, ব্লকচেইন, ড্রোনসহ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অগ্রসর প্রযুক্তিনির্ভর গবেষণা ও উদ্ভাবনী সমাধান হবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। স্মার্ট গভর্নমেন্ট হবে নাগরিককেন্দ্রিক, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক। কাগজবিহীন, উপাত্তনির্ভর, আন্তঃসংযুক্ত, আন্তঃচালিত, সমন্বিত, স্বয়ংক্রিয়। যোগাযোগে কাগজের ব্যবহার হবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে। অগ্রসর প্রযুক্তির ব্যবহার করে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, বিচার ব্যবস্থার মতো জরুরি খাতগুলো পরিচালিত হবে অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে। স্মার্ট সোসাইটি নিশ্চিত করবে বৈষম্যমুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক এক সমাজ ব্যবস্থা। সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ সহনশীল সমাজ, যা হবে নিরাপদ ও টেকসই। আর্থিকসহ সব ধরনের সেবায় নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তোলা হবে। এর মাধ্যমে গড়ে তোলা হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের সুপারিশ পেয়েছে। ন্যায্য, সত্য ও মানুষের কল্যাণের পক্ষে সোচ্চার দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বিনির্মাণের যে ভিশন ঘোষণা করেছেন তাতে শক্তি, সাহস, সক্ষমতা ও প্রেরণা জুগিয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। আগামী দিনে আবারও ক্ষমতাসীন হলে ২০৪১-এর আগেই বাংলাদেশ হবে বুদ্ধিদীপ্ত, উদ্ভাবনী ও সমৃদ্ধ উচ্চ অর্থনীতির আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৭৭তম জন্মদিনে সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

লেখক: এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী

me@palak.net.bd

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION